সপ্না আর নিলয় ছোট বেলা থেকেই একসাথে বড় হয়। সপ্নার বাবা ট্যাক্সি চালায়, আর নিলয়ের বাবা একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। দুই ফ্যামিলির মধ্যে সম্পর্কটা মন্দ নয়।সপ্না নিলয়কে মনে মনে ভালোবাসতো। কিন্তু কখনো বলতে পারে নি। তারা একত্রে অনার্স পাশ করে। নিলয়ের সরকারী চাকরি হয়। বাসা থেকে ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে দেয়। সপ্না বেচারি ঘরে বসে একা কাঁদে। কিছু করার থাকে না তার।সপ্নার অবস্থা দেখে তার মা সপ্নাকে চেপে ধরে। জিজ্ঞেস করে সমস্যা কি। কান্নাবিজরিত গলায় সপ্না জানায় তার লুকানো প্রেমের কথা। তার একপেশে ভালোবাসার কথা।সপ্নার পরিবারে দুঃখ নেমে আসে। সপ্নার বাবা জানতে পেরেমেয়েকে জলদি বিয়ে দেয়ার বেবস্থা করতে চান। কিন্তু সপ্নার এক কথা, তার মনের কোঠায় গভীরে সে নিলয়কেই বসিয়েছে। এখন কোনও অবস্থাতেই তার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়। সে এমনকি এই বলে হুমকি দেয় যে বাড়াবাড়ি করলে সে আত্মহত্যা করবে। সপ্নার পরিবারের সবাই ভয় পেয়ে যায়। সাথে সাথে কষ্টও পায়। কিন্তু কিছু করার থাকে না। একমাত্র মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া।বছর পাঁচেক পরের ঘটনা। সপ্নাএখন ঢাকাতে একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষিকা। গ্রামে ইধানিং যায় না সে। বাবা মার সাথে ফোনে কথা হয়। এক পুজার ছুটিতে ৫ দিনের জন্য গ্রামে গেলো সে। সে কি তখনো জ্যান্ত এইবারের গ্রামে ফেরা তার জীবনটা আমূল পাল্টে দিবে?সপ্না বাসায় ফিরে দেখে বাসারসবার মাঝেই একটা কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে। সপ্না মাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? সপ্নার মা প্রথমে সপ্নাকে কিছুই বলে না। মেয়ের চাপাচাপিতে তিনি সব খুলে বলেন।নিলয় গ্রামে এসেছে। তার একটাফুটফুটে বাবু হয়েছে। বাবুটার বয়স মাত্র ২ বছর। বাবুটাকে জন্ম দিতে গিয়ে তারমা মারা যায়। নিলয় গ্রামে এসে সপ্নার মা বাবার সাথে দেখা করতে আসে। ছেলেটার মনে এক অদ্ভুত ক্ষোভ দেখতে পান তারা। এক চাপা কষ্ট।সপ্না ঘটনা শুনে থ হয়ে যায়। জীবনটা কোনও সিনেমা নয় যে সে নিলয়ের বাচ্চাকে বড় করবে। তাকে নিজের মেয়ের মতো করে পালবে। কিন্তু সপ্নার খুব ইচ্ছে করে। আরও একবার সপ্না নিজের কাছে হেরে যায়। মুখ ফুটে বলতে পারে না তার গোপন ইচ্ছের কথা।পুজার ছুটি শেষ। আজ বিকেলে সপ্না ঢাকায় ফিরে যাবে। ব্যাগ গুছুচ্ছে এসময় সপ্নার মা দৌড়ে এসে খবর দিলেন নিলয় এসেছে।সপ্না চমকে যায়। সে চাচ্ছিল যেনও নিলয়ের সাথে তার দেখা না হয়। কি লাভ কষ্টের বুঝা বাড়িয়ে?মায়ের কথায় অবশেষে নিলয়ের সাথে দেখা হয় তার। দুজনেই চুপচাপ। হটাত নিলয় বলে উঠে, “ঢাকায় থাকো শুনলাম? আমিও ঢাকায় থাকি। পরিবাগে। তুমি?”“ধানমণ্ডিতে। আমরা ২জন ফ্রেন্ড একত্রে থাকি। ও আমারসাথে একই স্কুলে পড়ায়। আমাদের পাশের গ্রামেরই মেয়ে।”আরও কিছু কথা বলে তারা একে অপরকে বিদায় জানায়। “ভালো থেকো” বলে ঘুরে নিজের রুমের দিকে হাঁটতে থাকে সপ্না। অজানা কষ্টে বুকটা ধুমরে মুচড়ে যাচ্ছে। নিজের মনের উপর অসম্ভব জোর খাটিয়ে ফিরে চলে সে রুমের পথে।ঘাড় ঘুরিয়ে শেষবারের মতো ফিরে তাকায় সে। দেখল নিলর দাঁড়িয়ে আছে তার কুলে একটা ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে। নিলয়ের চোখটা ভেজা। দূর থেকেও দেখা যাচ্ছে অশ্রুকণাগুলো। কেন যেনও বাচ্চাটাকে দেখার পর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না সপ্না।নিলয় এবং সপ্নার বিয়ে হয় তাদের উভয় পরিবারের অনুমতি নিয়ে। ঢাকার পরিবাগেই এখন আছি আমরা। আমিই সেই মেয়ে। আর আমার বাবা মা আমার নাম কি রেখেছেন জানেন? “আলো”। বাবা-মার কাছ থেকে পুরো ঘটনাটি শুনি আমি তাদের ১৪তম বিবাহবার্ষিকীতে। এরপরেই লিখে ফেলি। আর আজ জানিয়ে দিলাম পৃথিবীকে।সবাই দোয়া করবেন আমার পরিবারের জন্য। আমি ক্লাস টেনে পড়ি এখন। আমি আমার মাকে হারিয়েছি, কিন্তু পেয়েছি তারচেয়েও একজন শ্রেষ্ঠ মমতাময়ী নারীকে। তোমাদের দুজনকেই অনেক অনেক ভালোবাসি মা-বাবা।
HELAPAKRI BAZAR is a small market. It is situated in maynaguri block of jalpaiguri district.
Monday, 16 November 2015
HELAPAKRI
সপ্না আর নিলয় ছোট বেলা থেকেই একসাথে বড় হয়। সপ্নার বাবা ট্যাক্সি চালায়, আর নিলয়ের বাবা একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। দুই ফ্যামিলির মধ্যে সম্পর্কটা মন্দ নয়।সপ্না নিলয়কে মনে মনে ভালোবাসতো। কিন্তু কখনো বলতে পারে নি। তারা একত্রে অনার্স পাশ করে। নিলয়ের সরকারী চাকরি হয়। বাসা থেকে ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে দেয়। সপ্না বেচারি ঘরে বসে একা কাঁদে। কিছু করার থাকে না তার।সপ্নার অবস্থা দেখে তার মা সপ্নাকে চেপে ধরে। জিজ্ঞেস করে সমস্যা কি। কান্নাবিজরিত গলায় সপ্না জানায় তার লুকানো প্রেমের কথা। তার একপেশে ভালোবাসার কথা।সপ্নার পরিবারে দুঃখ নেমে আসে। সপ্নার বাবা জানতে পেরেমেয়েকে জলদি বিয়ে দেয়ার বেবস্থা করতে চান। কিন্তু সপ্নার এক কথা, তার মনের কোঠায় গভীরে সে নিলয়কেই বসিয়েছে। এখন কোনও অবস্থাতেই তার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়। সে এমনকি এই বলে হুমকি দেয় যে বাড়াবাড়ি করলে সে আত্মহত্যা করবে। সপ্নার পরিবারের সবাই ভয় পেয়ে যায়। সাথে সাথে কষ্টও পায়। কিন্তু কিছু করার থাকে না। একমাত্র মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া।বছর পাঁচেক পরের ঘটনা। সপ্নাএখন ঢাকাতে একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষিকা। গ্রামে ইধানিং যায় না সে। বাবা মার সাথে ফোনে কথা হয়। এক পুজার ছুটিতে ৫ দিনের জন্য গ্রামে গেলো সে। সে কি তখনো জ্যান্ত এইবারের গ্রামে ফেরা তার জীবনটা আমূল পাল্টে দিবে?সপ্না বাসায় ফিরে দেখে বাসারসবার মাঝেই একটা কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে। সপ্না মাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? সপ্নার মা প্রথমে সপ্নাকে কিছুই বলে না। মেয়ের চাপাচাপিতে তিনি সব খুলে বলেন।নিলয় গ্রামে এসেছে। তার একটাফুটফুটে বাবু হয়েছে। বাবুটার বয়স মাত্র ২ বছর। বাবুটাকে জন্ম দিতে গিয়ে তারমা মারা যায়। নিলয় গ্রামে এসে সপ্নার মা বাবার সাথে দেখা করতে আসে। ছেলেটার মনে এক অদ্ভুত ক্ষোভ দেখতে পান তারা। এক চাপা কষ্ট।সপ্না ঘটনা শুনে থ হয়ে যায়। জীবনটা কোনও সিনেমা নয় যে সে নিলয়ের বাচ্চাকে বড় করবে। তাকে নিজের মেয়ের মতো করে পালবে। কিন্তু সপ্নার খুব ইচ্ছে করে। আরও একবার সপ্না নিজের কাছে হেরে যায়। মুখ ফুটে বলতে পারে না তার গোপন ইচ্ছের কথা।পুজার ছুটি শেষ। আজ বিকেলে সপ্না ঢাকায় ফিরে যাবে। ব্যাগ গুছুচ্ছে এসময় সপ্নার মা দৌড়ে এসে খবর দিলেন নিলয় এসেছে।সপ্না চমকে যায়। সে চাচ্ছিল যেনও নিলয়ের সাথে তার দেখা না হয়। কি লাভ কষ্টের বুঝা বাড়িয়ে?মায়ের কথায় অবশেষে নিলয়ের সাথে দেখা হয় তার। দুজনেই চুপচাপ। হটাত নিলয় বলে উঠে, “ঢাকায় থাকো শুনলাম? আমিও ঢাকায় থাকি। পরিবাগে। তুমি?”“ধানমণ্ডিতে। আমরা ২জন ফ্রেন্ড একত্রে থাকি। ও আমারসাথে একই স্কুলে পড়ায়। আমাদের পাশের গ্রামেরই মেয়ে।”আরও কিছু কথা বলে তারা একে অপরকে বিদায় জানায়। “ভালো থেকো” বলে ঘুরে নিজের রুমের দিকে হাঁটতে থাকে সপ্না। অজানা কষ্টে বুকটা ধুমরে মুচড়ে যাচ্ছে। নিজের মনের উপর অসম্ভব জোর খাটিয়ে ফিরে চলে সে রুমের পথে।ঘাড় ঘুরিয়ে শেষবারের মতো ফিরে তাকায় সে। দেখল নিলর দাঁড়িয়ে আছে তার কুলে একটা ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে। নিলয়ের চোখটা ভেজা। দূর থেকেও দেখা যাচ্ছে অশ্রুকণাগুলো। কেন যেনও বাচ্চাটাকে দেখার পর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না সপ্না।নিলয় এবং সপ্নার বিয়ে হয় তাদের উভয় পরিবারের অনুমতি নিয়ে। ঢাকার পরিবাগেই এখন আছি আমরা। আমিই সেই মেয়ে। আর আমার বাবা মা আমার নাম কি রেখেছেন জানেন? “আলো”। বাবা-মার কাছ থেকে পুরো ঘটনাটি শুনি আমি তাদের ১৪তম বিবাহবার্ষিকীতে। এরপরেই লিখে ফেলি। আর আজ জানিয়ে দিলাম পৃথিবীকে।সবাই দোয়া করবেন আমার পরিবারের জন্য। আমি ক্লাস টেনে পড়ি এখন। আমি আমার মাকে হারিয়েছি, কিন্তু পেয়েছি তারচেয়েও একজন শ্রেষ্ঠ মমতাময়ী নারীকে। তোমাদের দুজনকেই অনেক অনেক ভালোবাসি মা-বাবা।
Subscribe to:
Comments (Atom)